পৃথিবী সৃষ্টি কীভাবে হল?
পৃথিবী সৃষ্টির সময় সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ আছে। তবে 'তেজক্রিয় পদ্ধতি' অবলম্বন করে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি একটি গ্রহণযোগ্য মতামত দিয়েছেন। সেটা হলোসৌরজগতের একটি গ্রহ হিসেবে পৃথিবীর আবির্ভাব ঘটে আজ থেকে প্রায় ৫০০ কোটি বছর আগে ।
একেবারে গোড়ার দিকে পৃথিবী ছিল একটা প্রকান্ড ও প্রচন্ড উত্তপ্ত গ্যাসের গোলক । প্রাকৃতিক নিয়মে কোন জিনিস চিরকাল গরম থাকে না। এই নিয়মে ক্রমশ পৃথিবী ঠান্ডা হতে থাকে । তবে এই ঠান্ডা হওয়ার সময়টাও কম নয়বিশেষজ্ঞদের ধারণা পৃথিবী ঠান্ডা হতে সময় নিয়েছে প্রায় ৫০ কোটি বছর। এইসময় একটি পাকা ফল শুকিয়ে গেলে যেমন তা কুঁকড়ে যায়পৃথিবীর অবস্থা সেইরকম হলো । ফলে পৃথিবীর কোথাও উচু আবার কোথাও নিচু হয়ে গেল। শুরুতে পৃথিবীর অবস্থা এমনই ছিল।
মাটি সৃষ্টি হল কীভাবে?
বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীতে প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে কঠিন পাথর সমৃদ্ধ পাহাড় পর্বত। তারপর এইসৰ পাহাড় পর্বত থেকে নিসৃত বিভিন্ন ধরনের আগ্মেয়শিলা থেকেই ছাটির সৃষ্টি) পাহাড় পর্বত থেকে নিসৃভ আম্নেয়শিলা বিভিন্ন জপান্তরের সাধ্য ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে । এই ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা থেকেই মাটির সৃষ্টি । তে এই এ পরিবর্তন লক্ষ কোটি বছর ধরে হয়েছে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর উপরিভাগে জমে থাকা আগ্নেয়শিলা সূর্যাকিরণ এবংবাতাসের সাহায্যে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্রের তলদেশে জমা হতে থাকে । এই শিলার নাম “পাললিক শিলা” । পরবর্তীতে ক্রমে ক্রমে এইসব স্তরীভূত শিলার সাথে মিশে বিভিন্ন খনিজপদার্থ ও উদ্ভিদের দেহাবশেষ । বহু লক্ষ কোটি বছর.ধরে ধীরে ধীরে জমতে থাকা এইসব শিলা চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে থাকে নানা
রূপান্তরের মাধ্যমে । পরবর্তীতে এগুলো রূপ নেয় মাটির। শিলা থেকে তৈরি বলে মাটির সাথে পানি ও বাতাসের সম্পর্ক রয়েছে । ফলে পানি ও বাতাসের ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির প্রকারভেদ সৃষ্ট ইয়েছে। এই কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ফসল জন্মানো হয়ে থাকে।
পাহাড়-পর্বত সৃষ্টির উৎস কী?
সৃষ্টির শুরুতে অতি. উত্তপ্ত গ্যাসের পিণ্ড ছিল এই পৃথিবী । কালের বিবর্তনে পৃথিবীতে পানি ও স্থলের উদ্ভব হলো। কিন্তু পৃথিবীর উপরটা শীতল হলেও পৃথিবীর ভেতরটা পুরোপুরি ভাবে ঠাণ্ডা হতে পারল না। গরম বাষ্প ওপর দিকে উঠতে চাইল। আর স্বভাবতই পৃথিবীর অভ্যন্তরে অতি উত্তপ্ত গ্যাস বাইরে বেরিয়ে আসার সময় প্রচন্ড ধাককা দিল পৃথিবীর স্থলভাগে । আর যার ফলে স্থানে স্থানে উচু হয়ে গেল। এই উঁচু স্থানগুলো পরিণত হলো পর্বতে । আবার কখনও পৃথিবীর তৃকের ভাঙাগড়ার ফলেও পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা । কোথাও কোথাও পৃথিবীর পৃষ্ঠদেশ ক্ষয়ে ক্ষয়েও ছোটখাট পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। তবে স্থলভাগ বিদীর্ণ হয়েই বেশিরভাগ পাহাড়-পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম প্রাণের উৎপত্তি কবে ও কোথায় হয়?
পৃথিবী সৃষ্টির পর প্রথমে ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত, সুতরাং তখন প্রাণের উৎপত্তি হওয়া ছিল অসম্ভব। তাই পরবর্তীতে পৃথিবী শীতল হওয়ার পর যখন পানি ভর্তি এলাকার সৃষ্টি হয় তখনই আসে প্রাণের অনুকূল অবস্থা । আনুমানিক প্রায় ২০০ কোটি বছর আগে সমুদ্রের পানিতে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি হয় । বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রথম প্রাণকণা ছিল সুঁচের আগার মতো খুব ছোট এককণা আঠার মতো । সাগরের পানিতে এগুলো ভেসে বেড়াত। ধীরে ধীরে পানির সেই জীবকণা থেকেই ডাঙায় জীবের সৃষ্টি হয়েছে। এসব জলজ প্রাণীগুলো ছিল এককোধী জাতীয়। এগুলো নামেই অবশ্য প্রাণী ছিলআসলে এদের আচরণ ছিল অনেকটা উত্তিদের মত। বিজ্ঞানীরা বলেন, এইসব এককোধী প্রাণীই কালের বিবর্তনে উন্নত প্রজাতির বহুকোষী প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়েছে। এইসব এককোষী প্রাণী থেকে পরবর্তীতে ততকুড়ি লক্ষেরও বেশি ধরনের জীব সৃষ্টি হয়েছে। এককোধী প্রাণীদের মধ্যে আযামিবা জাতীয় প্রাণী এখনও টিকে আছে ।
স্থলভাগ ও জলভাগ সৃষ্টি কীভাবে হয়েছে?
পৃথিবী যখন ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হতে শুরু করলোতখন বিভিন্ন ধরনের গ্যাসীয় উপাদানগুলো ক্রমশ ঠাণ্ডা হয়ে পানির আকার ধারণ করতে লাগল । ফলে পৃথিবী শুকনো ফলের মতো কুঁকড়ে গেল। এইসময় উঁচু জায়গাগুলো তৈরি হলো স্থলভাগ এবং নিচু জায়গাগুলোতে ঠাণ্ডা হওয়া জলীয় বাস্প থেকে সৃষ্ট পানি এসে ভরে সেই জায়গাগুলো রূপান্তরিত হলো জলভাগে।
ক্রমশ বৃষ্টির পানি জমে জলভাগ আরও বিস্তৃত হলো । সৃষ্টি হলো নদী আর সমুদ্রের । গ্যাসীয় পদার্থগুলো ভারী হবার দরুন বিভিন্ন আকার ও আয়তন অনুযায়ী ভূপৃষ্ঠ থেকে নেমে গেল পৃথিবীর গভীরে । কোথাও কোথাও ফাটল দিয়ে পানি প্রবেশ করলো পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগে ৷ যেগুলো পরবতীতে ঝরণা আকারে বের হয়ে এসেছে পৃথিবীর গভীর থেকে ।
সূর্যের ভেতরের উপাদানগুলো কী কী?
সূর্য একটা জুবলস্ত অগ্নিপিগু । সূর্যের উপাদানের ৮১.৭ ভাগ হচ্ছে হাইড্রোজেন, ১৮.১৭ ভাগ হিলিয়াম ও বাকী অংশের মধ্যে রয়েছে ০.০৭ ভাগ নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, লোহা, নিকেল, সোডিয়াম, তামা, ক্যালসিয়াম, দস্তা ইত্যাদি মৌলিক পদার্থের গ্যাস।
মানুষের প্রথম জন্ম হয় কবে?
ধর্ম সংক্রান্ত বিভিন্ন মতবাদ বাদ দিলে বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান কালের সম্য মানুষের সৃষ্টি হতে লক্ষ কোটি বছর লেগে গিয়েছে। প্রথমে সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন আকৃতি ও প্রকৃতির উত্ভিদ। তারপর উদ্ভিদের খাবার তৈরির জন্য বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্ত্রাইভ শুষে নিয়ে পৃথিবীর বাতাসে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যখন একটা ভারসাম্য অবস্থার সৃষ্টি হয়তখন পৃথিবী প্রাণীদের বাসযোগ্য হয়ে ওঠে। অবশ্য তখনও মানুষের জন্ম হয় নি।
আনুমানিক ১৭ লক্ষ বছর আগে মানুষের জন্ম হয় বলে ধারণা করা হয়।_৪ লক্ষ বছর আগে “জাভা মানুষ” বা সটান খাড়া হয়ে চলা “হোমো ইরেকটাস” মানুষের_ৎপত্তি ঘটে । ৭০০০০ হাজার বছর আগে দেখা দেয় '," মানুষ” । এদের বাস ছিল ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আন্বিকায় । আ মানুষের পূর্বপুরুষ “ক্রো ম্যানিয় মানুষের” আর্বিভাব এরও অনেক পরে।পৃথিবীতে দিন ও রাত্রির রহস্য কী?
পৃথিবীর নিজস্ব কোনও আলো নেই। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসে বলেই পৃথিবী আলোকিত। পৃথিবী নিজের কল্পিত মেরুদণ্ডের চারিদিকে লাট্ুর মতো ঘুরছে। এইরকম ঘুরতে ঘুরতেই সে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। ফলে যখনই পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের মুখোমুখি হচ্ছেসেই অংশে এসে পড়ছে সূর্যের আলো। ফলে পৃথিবীর একটি পাশ আলোকিত হচ্ছে। পৃথিবীর এই অংশের এই সময়কে বলা হয় দিন। অন্যপাশটা যথারীতি অন্ধকার থাকে-তাই সেই অংশকে বলা হয় রাত। মুখোমুখি হয় তখন এপাশটা চলে যায় অন্ধকারে । তখন আগে যে অংশে দিন ছিল সেটা হয়ে যায় রাত আর আগে যে অংশ রাত ছিল সেটা হয়ে যায় দিন।
জোয়ার ভাটা হয় কেন?
নদী বা সমুদ্রে জোয়ার ভাটা হয় চাদের আকর্ষণ জনিত কারণে । জোরালো জোয়ারকে বলে ভরা কোটাল ও অল্প জোয়ারকে মরা কোটাল। পূর্ণিমায় জোরালো জোয়ার হয়। পৃথিবী ছাড়া অন্য গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা কেন নেই?
জীবনের সৃষ্টি ও স্থায়িত্ব জন্য প্রয়োজন জীবনদায়ী অক্সিজেন ও পানি। বৈজ্ঞানিকরা নানা তথ্যের সাহায্যে জানতে পেরেছেন পৃথিবী ছাড়া কোনও গ্রহে এই চাজীবনদায়ী অক্সিজেন ও পানি থাকার সম্ভাবনা নেই। এই কারণেই বলা হয় অন্য গ্রহের প্রাণের কোনও অস্তিত্ব নেই ও থাকার সন্তাবনাও নেই। যেমন চাদেও তা নেই।
পৃথিবীতে সকাল, দুপুর, বিকেল ও সন্ধ্যা হয় কীভাবে?
পৃথিবী একটু একটু করে পাক খায় আর তার গায়ে আছড়ে পড়া সূর্যের আলোর মাত্রাও একটু একটু করে পরিবর্তিত হতে থাকে । যেমন প্রথমে দিনের শুরুতে পূর্ব /আকাশে দেখা দেয় রক্তিম আভা । যাকে আমরা বলি ভোর। তারপর পৃথিবী একটু পাক খায় আর সূর্যের আলোও সরে যায়৷ যা আমরা অনুভব করি আলোর ক্রমশ কমে যাওয়া দেখে। একসময় সূর্য থাকে ঠিক মাথার ওপর। তখন তাকে আমরা বলি দুপুর। এইসময় সূর্যের আলো তীব্র হয়ে যায়। এরপর পৃথিবী পাক খেতে খেতে আরও সরে যায় ফলে ক্রমশ সূর্যের আলো আরও কমতে থাকে । একসময় সূর্যের আলো নরম আর কোমল হয়ে যায়। এই সময়টিকে বলা হয় বিকেল। তারপর আবার একসময় পাক খেতে খেতে পৃথিবীর আলোকিত অংশটি সূর্যের বিপরীতে চলে যেতে থাকে, তখন আর সেই অংশে সূর্যের আলো আসতে পারে না। তখন আস্তে আস্তে পৃথিবীতে নেমে আসতে থাকে অন্ধকার । এই সময়টাকে বলা হয় সন্ধ্যা। পৃথিবীর আলোকিত অংশটি যখন পাক খেতে খেতে একেবারে সূর্যের বিপরীত দিকে চলে যায়-তখন সেটা হয়ে যায় রাত। তখন কিন্তু পৃথিবীর অপর পাশটি অর্থাৎ যেখানে রাত ছিল সেটা হয়ে যায় দিন। এভাবেই চলতে থাকে পৃথিবীর আবর্তনআর চলতে থাকে দিন রাত্রির খেলা ।
সূর্যের শরীরটা কী দিয়ে তৈরি?
সূর্য দূর থেকে উজ্জ্বল তারকার মত দেখালেও তার দেহটা আয়তনের তুলনায় খুবই হালকা । সূর্যের দেহ জ্বলস্ত বাম্প দিয়ে গড়া । পৃথিবীকে ঘিরে যেমন একটা বায়ুমণ্ডলের আবরণ আছে, সূর্যকে ঘিরেও রয়েছে এইরকম তিনটে আবরণ । এই তিনটে আবরণ দিয়েই তৈরি হয়েছে সূর্যের আবহমগ্ুল। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা আরও অনেক বেশি । তাই সূর্য দিনরাত জ্লছে। সূর্যের তিনটা আবরণও সর্বক্ষণ এইভাবে জ্বলে মহাকাশে তাপ ও আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। সূর্যের তাপ যখন এত বেশি তখন বুঝতেই পারছ এখানে কঠিন বা তরল পদার্থের কোনও অস্তিত্ই নেই। সব কিছু এখানে গ্যাসীয় অবস্থায় রয়েছে । আমাদের পৃথিবীতে ঝড় উঠলে যেমন অনেক সময়ে মত্ত হাহা রবে উন্মাদিনী কাল বৈশাখীর নৃত্য শুরু হয়, ঠিক তেমনি সূর্যেও এর চাইতে আরও ভয়ানক জ্বলম্ত বাম্পরাশি অগ্নিবাষ্পের নৃত্য শুরু করে। এই বিক্ষুব্ধ অগ্রনিশিখা প্রায়ই সেখানে ঘটাচ্ছে দারুণ ঝড়ঝঞ্জা আর ঘূর্ণাবর্ত। এই ঘটনা ঘটে সৌরশিখা বা ১০1০1 111170-এয় জন্য । এই শিখাগুলি এমনই অশান্ত যে, কাখমও লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার পথ ছুটে চলে উধর্ধ অনস্ত আকাশের দিকে, কখনও আবার সূর্যের দেহেই আছড়ে পড়ে।
إرسال تعليق